বর্তমানে প্রায় সমস্ত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস বা COVID-19। এ রোগে বর্তমানে (04-01-2020) প্রায় ৯ লক্ষ্য মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। তাই, এই ভাইরাস কতটা ভয়াবহ তা সহজে অনুমেয়। আল্লাহ তায়ালা আমদের সবাইকে করোনা ভাইরাস থেকে হেফাযতে রাখুন এবং অতি সত্বর এই ভাইরাসটিকে যেন ধ্বংস করে নিমূল করে দেন। আমীন। এখন আমরা প্রশ্নের উত্তরে আসি। প্রশ্ন হচ্ছে যে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে জামাতে নামাযে কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা যাবে কি? এই উত্তর জানার আগে আমরা প্রথমে জানব যে, কাতারের মাঝে ফাকা না রাখার এবং কাতার সোজা করার গুরুত্ব কি। অবশ্য উত্তর প্রদান করেছেন- মুফতি মোহাম্মদ আলী ক্বাসেমী সাহেব (হাফিজাহুল্লাহ্)। চলুন নিম্নে জেনে নেইঃ
কাতারের মাঝে ফাঁকা না রাখা এবং সোজা করার গুরুত্ব ঃ
নামাযে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে কাতারের মাঝে ফাঁকা বন্ধ করা এবং কাতারগুলো প্রথম থেকে ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ করার গুরুত্ব অপরিসীম। পূর্ববর্তি উম্মতের নামাযের কাতার ছিলো গোলাকার। আর এই উম্মতের কাতার হলো লম্বালম্বি। এটা ইসলামের শৃঙ্খলা বান্ববতার একটি প্রত্যুজ্জল দৃষ্টান্ত।
রাসুলুল্লাহ্ (সাল্ললাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন—
অর্থাৎ: তোমরা তোমাদের নামাযের কাতার সমূহকে সোজা করো। কেননা-কাতার সোজা করা নামাযের পূর্ণতারই অংশ।[সহীহ মুসলিম:১৮২/১]
হযরত নোমান ইবনে বাশীরের বক্তব্য- রাসূল (সাল্লল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নামাযের কাতার সমূহকে এমনভাবে সোজা করতেন যেন এর মাধ্যমে তিনি তী সোজা করছেন।একদা জনৈক ব্যক্তিকে কাতারের সামনে দেখলে বললেন- তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করবে।নতুবা আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের মাঝে মতের আর মনের অমিল সৃষ্টি করে দিবেন। [সহীহ মুসলিম:১৮২/১]
সাহাবায়ে কেরামও বিষয়টির ভিষণ গুরুত্ব দিয়েছেন। হযরত উমর (রাদি:) তো এলোমেলো দেখলে বেত্রাঘাত পর্যন্ত করতেন। [ইলাউস সুনান:৩২১/৪]
হযরত উসমান (রাযি:) কাতার সঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকবীরে তাহরীমাই বলতেননা। [জামে তিরমীযি:৫৩/১]
কাতার সোজা ও সঠিক হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কাতারের মাঝে ফাঁকা না রাখা। কাতারের মাঝে ফাঁকা রেখে দাঁড়ানো বড়ই মারাত্মক বিষয়। রাসূল (সাল্লল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন—
سووا صفوفكم و حاذوا بين مناكبكم و سدوا الخلل فان الشيطان يدخل فيما بينكم بمنزلة الخذف يعني اولاد الضأن الصغار
অর্থাৎ: কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তোমরা তোমাদের নামাযের কাতার গুলোকে সোজা রাখো এবং কাতারের মাঝের খালী জায়গাকে পূর্ণ করে নাও।কারন-কাতারের মাঝে খালী থাকলে ভেড়ার বাচ্চার মতো অতি সন্তর্পণে সেখানে শয়তান অনু:প্রবেশ করতে পারে। [সুনানে নাসাঈ:৮১১/১]
রাসূল (সাল্লল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম] আরো বলেন– من وصل صفا وصله الله ومن قطع صفا قطعه الله
অর্থাৎ: যে ব্যক্তি কাতারের মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে কাতারকে মিলাবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে নিজের বিশেষ রহমতের সাথে যুক্ত করে নিবেন।আর যে ব্যক্তি কাতারের মাঝে ফাঁকা ও ফাটল সৃষ্টি করবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে নিজ রহমত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবেন।
শায়খ আবুল হাসান ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী কাতার সোজা করা ও ফাঁকা বন্ধ করে দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা ও এ ব্যাপারে বিভিন্ন ফকীহদের মতামতের উপর আলোকপাত করে বলেন—
المراد بإقامة الصفوف تسويتها، واعتدال القائمين فيها على خط مستقيم، وسمت واحد، والتراص فيها، وتتميمها الأول فالأول، وسد الخلل الذي في الصف، وعدم الفُرَج. قال العيني: وهي أي: تسوية الصف من سنة الصلاة عند أبي حنيفة والشافعي ومالك، وزعم ابن حزم أنه فرض
অর্থাৎ: কাতার সোজা করা মানে সমস্ত নামাযীগন ভারসাম্যপূর্ণ ভাবে পরস্পরে মিশে মিশে একটি সরল রেখায় সারিবদ্ধ হয়ে দাড়ানো এবং সামনের দিক থেকে একেক কাতার করে পূর্ণ করে আসা,মাঝের খালী জায়তা পূর্ণ করে কোন শুন্যতা না রাখা।আল্লামা আঈনী বলেন-ইমাম আবু হানীফা,শাফেঈ ও মালেক রহ. এর মতে কাতার সোজা করা সুন্নত।আর ইবনে হাযামের অভিমতে ফরয। (মিরআতুল মাফাতীহ)
এছাড়াও অনেকে মুস্তাহাব বলেছেন। দুররে মুখতারে এসেছে- কাতার সোজা করে দাঁড়ানো ওয়াজিব। হযরত ইমাম যায়লাঈ রহ. বলেন—
وينبغي للقوم إذا قاموا إلى الصلاة أن يتراصوا ويسدوا الخلل ويسووا بين منا كبهم في الصفوف
নামাযে দাঁড়ানোর সময় মুকতাদীদের করনীয় হলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাতারের মাঝের ফাঁকা বন্ধ করে মিশে মিশে দাঁড়ানো। [তাবঈনুল হাকাঈক]
সুতরাং কাতার সোজা করা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিশে মিশে দাঁড়ানো নামাযের একান্ত অপরিহার্য বিষয়। সোজা না করা এবং কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা মাকরুহ এবং সুন্নতের অবিচ্ছিন্ন কর্মপরম্পরা পরিপন্থি।
তাহলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা যাবে কি?
যদিও কাতার সোজা না করা এবং কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা মাকরুহ এবং সুন্নতের অবিচ্ছিন্ন কর্মপরম্পরা পরিপন্থি। তবে বর্তমানে বিশ্বগ্রাসী মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে স্বাস্থ সচেতনতার দৃষ্টিকোণ থেকে সরকারি নির্দেশনা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দ্বীনদার মুসলমান চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক, যদি নামাযীদের মাঝে ঈষৎ ফাঁকা রেখে নামায আদায় করা হয়, তাহলে এর অবকাশ/অনুমতি আছে (অর্থাৎ: কাতারের মাঝে ফাকা রাখা যাবে)। পরিবেশ পরিস্থিতির কারনে এভাবেও দাঁড়ানো যাবে। তবে এটা সুন্নতের অবিচ্ছিন্ন কর্ম পরম্পরার পরিপন্থি হবে।
সাম্প্রতিক বিন্নোরী টাউনস্থ জামি’আতুল উলূমিল ইসলামিয়ার ফাতাওয়া বিভাগ হতে প্রকাশিত এক ফাতাওয়াতে লেখনে-
کرونا وائرس کی وجہ سے حفظانِ صحت کے اصولوں کی رو سے حکومتی احکامات اور مسلمان دین دار ، تجربہ کا رڈاکٹر وں کے مشوروں کے مطابق اگر مسجد کی حدود کے اندر فاصلہ رکھ کر نماز پڑھ لی جائے تو نماز ادا ہوجائے گی، تاہم فاصلہ رکھ کر کھڑے ہونا سنتِ متواترہ کے خلاف ہے
[ফাতাওয়া নম্বর:১৪৪১০৭২০১১২৪]
প্রকাশ থাকে যে ,ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস হচ্ছে কোন ব্যাধিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রামক নয়। বরং বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে আল্লাহ্ তা’আলা চাইলে অপরজন পর্যন্ত সংক্রমিত হতে পারে।আল্লাহর ইচ্ছার বাহিরে সংক্রমিত হওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই করোনা ভাইরাস সম্পর্কেও সর্বাবস্থায় সংক্রমিত হবেই- এই ধারনা-বিশ্বাস মোটেই সঠিক নয়। তবে বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে সতর্কতা অবলম্বন করা, তাকওয়া-তাওয়াক্কুল এবং শরীয়তের চাহিদা পরিপন্থি না হওয়ায় তা অবশ্যই করা উচিৎ।
মাসআ’লা তাহকীক করেছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আলী ক্বাসেমী সাহেব (হাফিজাহুল্লাহ্)
পরিচালক ও প্রধান মুফতী:- জামি’আ ইমাম কাসেম নানুতবী ঢাকা, বাংলাদেশ।
ভাই,যখন আল্লাহর আযাব আসে তখন সুন্নাত পরিপন্থী আমল করলে আযাব কমবে না বরং বেড়ে যায়,,,,,,,,,,,,
আর সতর্ক থাকা মানে সুন্নাত ছেড়ে দেয়া না, বরং সুন্নাত কে আকরে ধরাই হল সতর্কতা, বেহায়া পনা ছেড়ে দেয়া হলো সতর্কতা,হাদীসে পাকে মধ্যে আসছে যখন সমাজের মধ্যে বেহায়াপনা বেড়ে যায় তখন আল্লাহ তায়ালা এমন নতুন রোগ পাঠান যার নাম আগে কখনোই শোনা যায়নি সুতরাং অশ্লীলতা বেহায়াপনা ছেড়ে দেয়া সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়া যত রকম অশ্লীল জায়গা আছে সেগুলো বন্ধ করে দেয়ায় হচ্ছে আসল সর্তকতা মসজিদ 24 ঘন্টা খোলা থাকা এটাই হল আসল সর্তকতা মসজিদের মধ্যে 100 পার্সেন্ট মুসলমান জামাতের সাথে সুন্নত তরিকায় নামাজ পড়বি তারপর আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করতে থাকবে এটাই হল আসল সর্তকতা মসজিদে যাওয়ার কারণে জামাতের সাথে নামাজ পড়ার কারণে সুন্নত এর উপরে চলার কারণে যদি আল্লাহতালা রোগে আক্রান্ত করেন আর যদি তার মৃত্যু হয় তো সে ব্যক্তি হবে শহীদ আর যদি কারো মৃত্যু সিনেমা হলে মদের বারে খারাপ কোন জায়গায় হয় তো তার ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ থাকতে পারে সুতরাং সমস্ত খারাপ জায়গা গুলো বন্ধ করে দেয়া হোক এটাই হলো সর্তকতা
সময় উপযোগী বিষয়ে খুবই সুন্দর উপস্থাপনা। আল্লাহ আপনার উত্তম জাঝা দান করুক।
আমীন। তবে এভাবে বারবার নো-ফলো ব্যাংকলিংক ক্রিয়েট করাতে কোনো লাভ নেই।