শবে মে’রাজ কি ইবাদতের জন্য বিশেষ ফযিলতের রাত? Is Shab e Meraj fazilat night for Ebadat?

জবাবঃ- শবে মে’রাজে ইবাদতের জন্য বিশেষ ফযীলতের কোন হাদীস বিদ্যমান নেই। তাই শবে মে’রাজের কোন গুরুত্বপূর্ণ আমল ইসলামী শরীয়তে নেই। রজব মাসের ১ম তারিখ ও ১ম শুক্রবার, ১০ ও ১৫ এবং ২৭ তারিখ শবে মে’রাজে রোযা রাখা, সালাতুর রাগায়েব নামক বিশেষ প্রকৃতির নামায পড়া সংক্রান্ত সকল হাদীসই জাল ও বানোয়াট।

লাতায়েফুল মা’য়ারিফে এসেছে যে,

فلم يصح في شهر رجب صلاة مخصوصة تختص به و الأحاديث المروية في فضل صلاة الرغائب في أول ليلة جمعة من شهر رجب كذب و باطل لا تصح و هذه الصلاة بدعة عند جمهور العلماء و من ذكر ذلك من أعيان العلماء المتأخرين من الحفاظ أبو إسماعيل الأنصاري و أبو بكر بن السمعاني و أبو الفضل بن ناصر و أبو الفرج بن الجوزي و غيرهم إنما لم يذكرها المتقدمون لأنها أحدثت بعدهم و أول ما ظهرت بعد الأربعمائة فلذلك لم يعرفها المتقدمون و لم يتكلموا فيها و أما الصيام فلم يصح في فضل صوم رجب بخصوصه شيء عن النبي صلى الله عليه و سلم و لا عن أصحابه (لطائف المعارف، ذكر ما يتعلق برجب من أحكام-131)

অনুবাদঃ- মাহে রজবে বিশেষ কোন নামায প্রমাণিত নয়। রজবের প্রথম শুক্রবারে সালাতুর রাগায়েবের ফযীলত সম্পর্কীয় হাদীসসমূহ বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট। বিজ্ঞ ওলামায়ে কিরামের মতে, এটি একটি নব আবিস্কৃত নামায। পরবর্তী যুগের অগাধ জ্ঞানের অধিকারী বিদগ্ধ ওলামায়ে কিরামগণ এটিকে বিদআত আখ্যা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আবু ইসমাঈল আনসারী, আবু বকর ইবনে সামআনী, আবুল ফযল ইবনে নাসের ও আবুল ফারায বিন জাওযী রহঃ প্রমূখ।

পূর্ববর্তীরা এ নিয়ে আলোচনা করননি। কেননা তাদের [ইন্তেকালের বেশ] পরে তা আবিস্কৃত হয়েছে। চারশত হিজরীরও পরে এটির প্রকাশ ঘটে। তাই পূর্ববর্তীদের নিকট এটি পরিচয় ঘটেনি এবং তারা এ ব্যাপারে কিছু বলে যাননি।

আর রোযা, রজব মাসের রোযার বিশেষ ফযীলতের কথা রাসূল সাঃ থেকে প্রমানিত নয়, সাহাবীদের থেকেও নয়। (লাতায়েফুল মাআরিফ-১৩১)

###আল্লামা ইমাম নববী রহঃ রজব মাসের সালাতুর রাগায়েব ও শবে বরাতের রাতে বিশেষ পদ্ধতির নামাযকে বিদআত আখ্যা দেওয়ার পর বলেন-

ولا يغتر بذكرهما فى كتاب قوت القلوب، وإحياء عليوم الدين، ولا بالحديث المذكور فيهما فإن كل ذلك باطل، (المجموع شرح المهذب-3/549)

অনুবাদঃ- আবু তালেব মক্কী রহঃ কুতূল কুলূব এ এবং ইমাম গাজ্জালী রহঃ ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন গ্রন্থে এ নামায দু’টি এবং সাথে এ সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করার কারণে ধোঁকায় পড়বেন না। কেননা এ সবগুলোই বাতিল ও ভিত্তিহীন।{আল মাজমাউ শরহুল মুহাযযাব-৩/৫৪৯)

রজব মাস এবং শবে মে’রাজের নামায-রোযা সম্পর্কে জাল বর্ণনাসূহের অসারতা আরো বিস্তারিত জানার জন্যে দেখা যেতে পারে-

তাবয়ীনুল আজব-
মাসাবাতা বিস সুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানা্হ
আল মওযূয়াত-২/৪৬-৪৯
আল মানারুল মুনীফ-৯৫-৯৭
তাখরীজে ইহইয়া ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন-১/২৯৬
আল লাআলিল মাসনূআ-২/৫৫-৫৯
তানযীহুশ শরীয়া-২/৮৯-৯০
ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন-৩/৪২২-৪২৫
আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআ-১/৭৩-৭৫
আল আসারুল মারফূআ-৫৮-৭০

তবে রজব মাস সম্পর্কিত নিম্নের হাদীসটি দুর্বল হলেও জাল তথা বানোয়াট নয়।

عن أنس قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا دخل رجب قال اللهم بارك لنا في رجب وشعبان وبلغنا رمضان

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রজব মাস আসলে পড়তেন- আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান। {মু’জামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-৩০৯, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪৯৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৫৩৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৪৬}

সুতরাং রাসূল সাঃ শবে মেরাজে বিশেষ কোন আমল করেন নি, তাই শবে মেরাজে বিশেষ আমল নেই। রাসূল (সাঃ) যা করেন নি, সেটাকে দ্বীন মনে করার নামই হল বিদআত। আর বিদআত মানে পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!