অযু ভঙ্গের কারণ সমূহ দলীলসহ দেখুন

অযু ভঙ্গের কারণ সমূহওযু ভঙ্গের কারণসমূহ অযু ভঙ্গের বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তবে মৌলিকভাবে অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি। নিম্নে সেগুলো দলীল সহকারে আলোচনা করার পর ছোট-খাটো কয়েকটি কারনের উত্তরও দেয়া হবে, যেগুলো ঐ মৌলিক ৭ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে শুরু করা যাক !

১) পায়খানা পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া  |  To go out something from the way of  যেমন বায়ু, পেশাব পায়খানা, পোকা ইত্যাদি।   [হেদায়া-১/৭]

দলীল

ﺃَﻭْ ﺟَﺎﺀَ ﺃَﺣَﺪٌ ﻣِّﻨﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟْﻐَﺎﺋِﻂِ ‏         [ ٥ :٦ অর্থাৎ যখন তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে, [তখন নামায পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও] {সূরা-মায়িদা-৬}

ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀُ ﻣِﻤَّﺎ ﺧَﺮَﺝَ، ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻤَّﺎ ﺩَﺧَﻞَ অনুবাদ হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শরীর থেকে যা কিছু বের হয় এ কারণে অযু ভেঙ্গে যায়, প্রবেশের দ্বারা ভঙ্গ হয় না। [সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৬৮]

ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺭَﺑَﺎﺡٍ، ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﻓِﻲ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺘَﻮَﺿَّﺄُ ﻓَﻴَﺨْﺮُﺝُ ﺍﻟﺪُّﻭﺩُ ﻣِﻦْ ﺩُﺑُﺮِﻩِ، ﻗَﺎﻝَ : ” ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀُ ” ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﻭَﺟَﻤَﺎﻋَﺔٌ অনুবাদ হযরত আত্বা বিন আবী রবাহ রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি অযু করে, তারপর তার পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন পোকা ইত্যাদি বের হয়, তাহলে তার উপর পুনরায় অযু করা আবশ্যক। একই কথা বলেছেন হাসান বসরী রহঃ এবং মুহাদ্দিসদের এক জামাত। [সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৫৬৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/৩৯, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-১/১৬৪]

২) রক্ত, পুঁজ বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া |[হেদায়া-১/১০]

দলীল

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳُﻔْﺘِﻲ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﺇِﺫَﺍ ﺭَﻋَﻒَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ، ﺃَﻭْ ﺫَﺭَﻋَﻪُ ﻗَﻲْﺀٌ، ﺃَﻭْ ﻭَﺟَﺪَ ﻣَﺬِﻳًّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺼَﺮِﻑَ ﻓَﻴَﺘَﻮَﺿَّﺄُ অনুবাদ হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি যদি কারো নামাযরত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, বা বমি হতো, বা মজি বের হতো তাহলে তাকে ফিরে গিয়ে অযু করার ফাতওয়া প্রদান করতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৬১০]

ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ، ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﺎ ﻳَﺮَﻯ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺪَّﻡِ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺳَﺎﺋِﻠًﺎ অনুবাদ হযরত হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি প্রবাহমান পরিমাণ রক্ত ঝড়লেই অযু করা জরুরী মনে করতেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/১৩৭, হাদীস নং-১৪৫৯]

৩) মুখ ভরে বমি করা

দলীল

ﻉْﻥَ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ‏« ﻣَﻦْ ﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﻗَﻲْﺀٌ ﺃَﻭْ ﺭُﻋَﺎﻑٌ ﺃَﻭْ ﻗَﻠَﺲٌ ﺃَﻭْ ﻣَﺬْﻱٌ، ﻓَﻠْﻴَﻨْﺼَﺮِﻑْ، ﻓَﻠْﻴَﺘَﻮَﺿَّﺄْ অনুবাদ হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অযু করে নিবে। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১২২১]

ﻣُﻐِﻴﺮَﺓُ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﺄَﻟْﺘُﻪُ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻘَﻠْﺲِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ‏« ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﺮَّﺳْﻊُ، ﺇِﺫَﺍ ﻇَﻬَﺮَ ﻓَﻔِﻴﻪِ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀُ অনুবাদ ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ কে বমির ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলেন মুগীরাহ রহঃ। তখন তিনি উত্তরে বললেন, যদি তা মুখ ভরে হয়, তাহলে অযু করতে হবে। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৪৩৩]

৪) থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া

দলীল

ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ ﻓِﻲ ﺭَﺟُﻞٍ ﺑَﺰَﻕَ ﻓَﺮَﺃَﻯ ﻓِﻲ ﺑُﺰَﺍﻗِﻪِ ﺩَﻣًﺎ، ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻢْ ﻳَﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﺩَﻣًﺎ ﻏَﻠِﻴﻈًﺎ، ﻳَﻌْﻨِﻲ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒُﺰَﺍﻕِ অনুবাদ হাসান বসরী রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার উপর অযু করা আবশ্যক হয় না। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩৩০]

ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞِ ﻳَﺒْﺰُﻕُ ﻓَﻴَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺑُﺰَﺍﻗِﻪِ ﺍﻟﺪَّﻡُ، ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﺫَﺍ ﻏَﻠَﺒَﺖِ ﺍﻟْﺤُﻤْﺮَﺓُ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽَ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻏَﻠَﺐَ ﺍﻟْﺒَﻴَﺎﺽُ ﺍﻟْﺤُﻤْﺮَﺓَ ﻟَﻢْ ﻳَﺘَﻮَﺿَّﺄْ » অনুবাদ হযরত ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে, তাহলে সাদার উপর লাল রঙ বেশি থাকে, তাহলে অযু করবে, আর যদি লালের উপর সাদার আধিপত্ব থাকে, তাহলে অযু লাগবে না। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩৩২]

৫) চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া

দলীল

ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ” ﻟَﻴْﺲَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﻧَﺎﻡَ ﺳَﺎﺟِﺪًﺍ ﻭُﺿُﻮﺀٌ، ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻀْﻄَﺠِﻊَ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﺍﺿْﻄَﺠَﻊَ، ﺍﺳْﺘَﺮْﺧَﺖْ ﻣَﻔَﺎﺻِﻠُﻪُ অনুবাদ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেজদা অবস্থায় ঘুমালে অযু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা, চিৎ বা কাত হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়। [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩১৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০২}

৬) পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে

দলীল

ﻋَﻦْ ﺣَﻤَّﺎﺩٍ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻓَﺎﻕَ ﺍﻟْﻤَﺠْﻨُﻮﻥُ ﺗَﻮَﺿَّﺄَ ﻭُﺿُﻮﺀَﻩُ ﻟِﻠﺼَّﻠَﺎﺓِ অনুবাদ হযরত হাম্মাদ রহঃ বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্য হয়, তখন নামাযের জন্য তার অযু করতে হবে। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৪৯৩]

৭) নামাযে উচ্চস্বরে হাসি দিলে

দলীল

ﻋَﻦْ ﻋِﻤْﺮَﺍﻥَ ﺑْﻦِ ﺣُﺼَﻴْﻦٍ , ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ : ‏« ﻣَﻦْ ﺿَﺤِﻚَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻗَﺮْﻗَﺮَﺓً ﻓَﻠْﻴُﻌِﺪِ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ‏». ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺑْﻦُ ﻗُﺘَﻴْﺒَﺔَ : ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻬْﻘَﻪَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺃَﻋَﺎﺩَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﻭَﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ . অনুবাদ হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অযু ও নামায পুনরায় আদায় করবে। হযরত হাসান বিন কুতাইবা রহঃ বলেন, যখন কোন ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অযু ও নামায পুনরায় আদায় করবে। [সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬১২]

ﻣَﻦْ ﺿَﺤِﻚَ ﺃَﻥْ ﻳُﻌِﻴﺪَ ﺍﻟْﻮُﺿُﻮﺀَ ﻭَﻳُﻌِﻴﺪَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ অনুবাদ হযরত আবু মূসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে হেসেছে, সে পুনরায় অযু করে সালাত আদায় করবে। [সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬০৪, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১২৭৮]

কতটুকু রক্ত বা পুজ বের হলে অযু ভঙ্গ হবে?

শরিরের কোনো স্থান থেকে রক্ত বা পুজ যদি গড়িয়ে ক্ষতস্থান অতিক্রম করে, তাহলে অযু ভঙ্গ হবে। আর, যদি ক্ষতস্থান অতিক্রম না করে, তাহলে অযু ভঙ্গ হবে না। তথ্যসূত্র ঃ- হেদায়া ১ম খন্ড।

ক্ষতস্থান থেকে কীট বের হলে অযু ভঙ্গ হবে কি?

ক্ষতস্থান থেকে কীট বের হলে অযু ভঙ্গ হবে না। তবে, পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কীট বের হলে অযু ভঙ্গ হবে। কারন, মূলত কীট নাপাক না হলেও, তার দেহে লেগে থাকা পদার্থ হলো নাজিস তথা নাপাক এবং তা অতি অল্প। আর অল্প নাজাসাত পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হওয়া অযু ভঙ্গের কারণ। কিন্তু অন্য স্থান থেকে অল্প বের হওয়া নাজাসাত অযু ভঙ্গের কারন নয়। তথ্যসূত্রঃ- হেদায়া ১ম খন্ড।

নামাযে অট্টহাসির কারণে অযু ভঙ্গ হবে কি?

ক্বিয়াস এবং যুক্তি অনুযায়ী নামাযের মধ্যে অট্টহাসির কারনে, অযু ভঙ্গ হওয়ার কথা না। এটা ঈমাম শাফেয়ী (র) এর মত ও। কারণ, এটা নির্গত নাজাসত নয়। এ জন্য জানাযার নামাযে, তেলাওয়াতে সিজদা ও নামাযের বাহিরে, এর(অট্টহাসি) কারনে অযু ভঙ্গ হয় না। কিন্তু  রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাযে অট্টহাসির ফলে অযু ভঙ্গের কারন সম্বন্ধ্যে হানাফিগণ বলেন, রাসূল (স) বলেছেন যে, তোমাদের  কেউ অট্টহাসি করলে, অযু ও নামায উভয়ই পুনরায় আদায় করবে। (দারা কুতনি ও তাবরানি)


সুতরাং, মাশহুর হাদিস ক্বিয়াস এর উপর প্রধান্য হবে। এছাড়া, এই হাদিসটি নামায সম্পর্কিত। তাই, নামাযে অট্টহাসির কারনে অযু ও নামায উভই ভঙ্গ হবে। আর, কেউ কেউ বলেছেন, অট্টহাসির কারনে অযু ভঙ্গ হয় কিন্তু নামায ফাসিদ তথা ভঙ্গ হয় না। উল্লেখ্য যে, অট্টহাসি মানে হলো যা নিজে এবং পার্শ্ববর্তী শুনতে পায়। তথ্যসূত্র ঃ- হেদায়া ১ম খন্ড।

 

কিভাবে ঘুমালে অযু ভঙ্গ হবে?

যদি কোনো ব্যক্তি কাত হয়ে বা হেলান কিংবা কোনো কিছুতে ঠেস লাগিয়ে এমনভাবে ঘুমায় যে, তা সড়িয়ে ফেললে, সে পড়ে যাবে। তখন এমতাবস্থায় অযু ভঙ্গ হবে। নবী করিম (সা) বলেছেন দাঁড়িয়ে, বসে, রুকুতে বা সিজদায় যে ঘুমায়, তার উপর অযু আবশ্যক নয়। আর অযু আবশ্যক হলো তার উপর, যে পার্শ্বে হেলান দিয়ে ঘুমায়। কেননা পার্শের উপর ঘুমানলে শরিরের গ্রন্থি শিথিল হয়ে যায়। (দারা কুতনি ও তাবরানী) তথ্যসূত্র ঃ- হেদায়া ১ম খন্ড।

আগুনে পাকানো কোনো বস্তু খেলে অযু ভঙ্গ হবে কি?

আগুনে পাকানো কোনো বস্তু খাওয়ার দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে কি না?- এ ব্যাপারে ইসলামের প্রথমিক যুগে সাহাবায়ে কেরামগণের মধ্যে কিছুটা মতানৈক্য ছিল। যেমনঃ-হযরত আবু হুরায়রা, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর এবং যায়েদ ইবনে ছাবিত (রা) প্রমুখের মতে, আগুনে পাকানো বস্ত খাওয়ার দ্বারা অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। অপরদিকে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম যেমন খোলাফায়ে রাশেদীন, ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ (রা) বলেন যে, অযু ভঙ্গ হবে না।

উল্লেখ্য যে, উভয় পক্ষেরই বহু দলীল রয়েছে।  তবে, পরবর্তীতে সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, অযু ভঙ্গ না হওয়ার ব্যাপারে। তাই, এ ব্যাপারে চার ইমামের মাঝেও কোনো মতভেদ নেই।  বরং সকলেই একমত যে, আগুনে পাকানো বস্তু খাওয়ার দ্বারা অযু ভঙ্গ হবে না।

★★যে সমস্ত হাদীসে অযু করার বা ভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর জবাব উলামায়ে কেরামগণ বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। যেমনঃ  

  1. মাসাবীহ গ্রন্থগার বলেন, যেসকল হাদীসে অযু করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো ইবনে আব্বাস (রা) এর হাদিস দ্বারা মানসুখ হয়ে গেছে। হাদিসটি এই-   ان رسول الله, اكل كتف شاة ثم صلي ولم يتوضٱ —- কিন্তু এই হাদিস পুরোপুরি নসখ বা মানসুখ এর উপর ইঙ্গিত করে না। তাই, উত্তম হল, জাবের (রা) এর হাদিসকে নাসিখ নির্ধারণ করা। হাদিসটি হচ্ছে, كان اخر الامرين من رسول الله, ترك الوضوء مما مست النار—-
  2. হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ (র) বলেন, যেসব হাদিসে অযুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা শুধু বিষেশ বিষেশ মানুষের জন্য, জন-সাধারণের জন্য নয়। 
  3. অথবা, কেউ বলেন, যে সব হাদিসে অযুর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো দ্বারা শরয়ী অযু উদ্দেশ্য নয় বরং শাব্দিক অযু তথা হাত-মুখ ধোয়া উদ্দেশ্য। ইত্যাদি।

     ★তথ্যসূত্রঃ আল-মাফাতীহ, মিশকাতুল মাসাবীহ। পৃঃ১০৮.

আরও পড়ুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!