জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার হওয়ার নিয়ম বা সুযোগ দিয়েছে। তবে এর কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত :
এক কলেজ থেকে অন্য কলেজে ট্রান্সফার হওয়ার নিয়ম
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান / পাস) প্রোগ্রামের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সরকারি কলেজ হতে সরকারি বা বেসরকারি কলেজে এবং বেসরকারি কলেজ হতে শুধুমাত্র বেসরকারি কলেজে ছাড়পত্র বা কলেজ ট্রান্সফার করতে পারবে। তবে একজন শিক্ষার্থী একাধিকবার ছাড়পত্র নিতে পারবে না।
টিসি নিয়ে কলেজ পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই স্নাতক ১ম বর্ষের সকল বিষয়ে উত্তীর্ণ বা পাস করতে হবে এবং ১ম বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
তো আবেদন করার নিয়ম জানার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ট্রান্সফার হওয়ার কারণগুলো জেনে নিতে হবে। তাই সেগুলো আগে বর্ণনা করে পরে আবেদন করার নিয়ম সহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দেয়া হলো।
যেসব কারণে কলেজ ট্রান্সফার করা যাবে
অভিভাবক বদলী : চাকুরীরত অভিভাবক (তথা পিতা/মাতা/স্বামী) অন্য জেলায় বদলী হলে অথবা জীবিত না থাকলে বা অসমর্থ হলে আইনানুগ অভিভাবকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। শুধুমাত্র সরকারী, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অভিভাবকের বদলীজনিত কারনে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে। এ জন্য চাকুরীরত অভিভাবকের বদলীর আদেশ, যোগদানপত্র, চাকুরীর আইডি কার্ড ও অভিভাবকের সম্মতিপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্তি করতে হবে।
বিবাহীতা শিক্ষার্থী : ভর্তির পর মেয়ে শিক্ষার্থী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে বিবাহের কাবিননামা, (হিন্দু, খ্রীস্টান ও বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে কাবিননামা না থাকলে ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি ও বিয়ের দাওয়াতপত্র), স্বামী যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন তার প্রত্যয়নপত্র, যোগদানপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র/অন্য কর্মে নিয়োজিত তার প্রামাণ্যপত্র।
পঠিত বিষয় : শিক্ষার্থীর স্থায়ী ঠিকানার নিকটবর্তী কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম / পঠিত বিষয়টি অধিভুক্তি না থাকলে সে পার্শ্ববর্তী জেলার নিকটবর্তী কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজের/পিতা/মাতা এর জাতীয় পরিচয়পত্র ও অভিভাবকের মতামত পত্র জমা দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনার যোগ্য মনে করলে ছাড়পত্র (টিসি) দিবেন।
অভিভাবকের মৃত্যু : যদি অভিভাবক সদ্য মৃত্যুবরণ করেন সে ক্ষেত্রে ডাক্তার কর্তৃক ডেথ সার্টিফিকেট এর কপি অথবা চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। অভিভাবকের মৃত্যুজনিত কারনে অভিভাবকের দায়িত্ব যার উপর অর্পিত হয়েছে তার সম্মতিপত্র, তার পেশা ও কর্মস্থল সংক্রান্ত প্রামাণ্যপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।
শতবর্ষী কলেজ : শতবর্ষী কলেজ (যে কলেজের বয়স ১০০ বছর) হতে সকল সরকারি-বেসরকারি কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে কিন্তু শতবর্ষী ব্যতিত অন্য কোন সরকারি-বেসরকারি কলেজ শতবর্ষী কোন কলেজে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
একই জেলার কলেজ : একই জেলায় অবস্থিত দুটি কলেজের মধ্যে ছাড়পত্রের অনুমোদন দেয়া হবে না। তবে বিশেষ কারণবশত মেয়ে শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে উক্ত শর্ত শিথিলযোগ্য।
আরও দেখুন
কলেজ ট্রান্সফার করার আবেদন নিয়ম
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ ট্রান্সফার করতে প্রথমে একটি টিসি ফরম হাতে পূরণ করে নিজ কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানের (অনার্সের শিক্ষার্থী হলে) সীল ও স্বাক্ষর নিতে হবে এবং পরে (একই ফরমের নিচের দিকে) যে কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সে কলেজের অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানের (অনার্সের শিক্ষার্থী হলে) সীল ও স্বাক্ষর নিতে হবে।
এরপর প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র (ডকুমেন্টস) যোগাড় করতে হবে এবং প্রত্যেকটির নাম আলাদা করে লিখে প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন পিডিএফ ফাইল বানাতে হবে। এরপর অনলাইনে আবেদন করতে বসতে হবে।
অনলাইনে আবেদনের সময় প্রথমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে একটি স্টুডেন্ট আইডি খুলতে হবে। অবশ্য একেক আবেদনকারীর একেক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে হবে। স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে এই লিংক থেকে প্রবেশ করুন। একাউন্ট খোলার নিয়ম এখান থেকে দেখুন।
২য় ধাপ : রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে এই লিংক থেকে (ID নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে) লগ-ইন করতে হবে।
লগইন করার পর বামদিকে থাকা Academic Services -এ ক্লিক করলে Academic Services For Student এর তালিকা পাবেন। এই তালিকায় Transfer College(TC) -তে ক্লিক করলে ছাড়পত্রের আবেদন ফরম পাবেন।
উক্ত ফরম টি পুরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যা যা লাগে তা পিডিএফ আকারে আপলোড করে proceed অপশনে ক্লিক করবেন। অবশ্য প্রত্যেকটি ডকুমেন্টের আলাদা আলাদা নাম দিয়ে আপলোড করবেন। তারপর ফরমটি প্রিন্ট করে সোনালি ব্যাংকে গিয়ে ফি ১০৬/- টাকা জমা দিতে হবে।
আবেদন করার পর করণীয়
প্রার্থীর প্রাথমিক আবেদন যাচাই বাছাই করে এক সপ্তাহের মধ্যেই SMS এর মাধ্যমে তার আবেদন বিবেচনা যোগ্য কিনা তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
আবেদন গ্রহণযোগ্য হলে প্রার্থীকে ছাড়পত্রের ফি ১০০০/- টাকা সহ নির্ধারিত ফরমে বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।
যেসব কাগজপত্র লাগবে
চূড়ান্ত আবেদনের সাথে ছাড়পত্র প্রদানকারী কলেজের টিসি ফরম বা দরখাস্ত, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র সহ আরও বিভিন্ন কাগজপত্র লাগবে। তাছাড়া আবেদনের সাথে ১ম বর্ষের রেজিঃ কার্ড, প্রবেশপত্র ও পরীক্ষার অনলাইন ফলাফল কপি জমা দিতে হবে। চলুন নিম্নে দেখে নেই কি কি কাগজপত্র লাগবে :
১) নিজ কলেজের টিসি ফর্ম।
২) চেয়ারম্যান / কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র।
৩) অভিভাবকের সম্মতিপত্র।
৪) অভিভাবকের আইডি কার্ড।
৫) অনার্সের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র।
৬) অনার্সের ফলাফলের অনলাইন কপি।
৭) নিজের ২/১ কপি ছবি।
৯) এইচ এস সি ও এসএসসির রোল / নম্বরপত্রের কপি।
১০) এছাড়া আবেদন কারীর ধরণ অনুযায়ী আরও কাগজপত্র লাগবে যা উপরে বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী হলে প্রতিবন্ধী বিষয়ে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত সনদপত্র জমা দিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
উল্লেখ্য যে, শিক্ষার গুনগত মানোন্নয়নের প্রতি লক্ষ রেখে ছাড়পত্র অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রার্থী যে কলেজে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সে কলেজের প্রার্থীত বিষয়ের শিক্ষার্থী – শিক্ষক সংখ্যানুপাত Optimum সংখ্যার অনেক বেশী হলে প্রার্থীর আবেদন বিবেচনা করা হবে না। প্রামাণ্য তথ্যে কোন জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল বলে গন্য হবে।
ভাইয়া যদি অনার্স ১ম বর্ষে ১/২ বিষয়ে ফেল আসে। তাহলেও কি ট্রান্সফার হওয়া যাবে?
na
২য় বর্ষে কি ট্রান্সফার হওয়া যাবে না?
জ্বি, হ্যা, পারবেন।
২য় বর্ষে যদি ১ বিষয়ে ফেইল আসে তখন কি ট্রান্সফার হওয়া যাবে?
zabe
আমি কি অন্য কলেজে গিয়ে একই সব্জেক্ট পাবো?
অন্য কলেজে সেইম সাবজেক্ট থাকলে তবেই ট্রান্সফার হতে পারবেন।
ডিগ্রিতে টিসি নেওয়া যাবে কিনা?
যাবে
Bai ami tc niye apner guide line nite chai..
Apner WhatsApp number ta ki diben
আমার ফেসবুক পেইজে মেসেজ দেন
ভাই আমি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আমি সিলেট MC কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত আছি। আমার দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ, এতো দূর থেকে সিলেট এসে পড়াশোনা করা আমার জন্য কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি MC কলেজ থেকে ট্রান্সপার হয়ে আনন্দ মোহন কলেজে চলে যাবো। আমি কি ট্রান্সপার হতে পারবো ভাই?
দুঃখিত! আপনি মেয়ে হলে পারতেন।
ভাইয়া আমার বাসা থেকে অনেক দূরে কলেজ আমি কি ট্রান্সফার নিতে পারবো?
পারবে। তবে একই জেলার দুটি কলেজে পারবেন না।
ভাইয়া আমি ২২-২৩ এর স্টুডেন্ট এখন চাচ্ছি বরিশাল থেকে বাউফল ট্রান্সফার হতে আমি কি পারব ট্রান্সফার হতে? কোন পরীক্ষা দেওয়ার আগে ট্যান্সফার হওয়া যাবে? কারন আমি কোন পরীক্ষাই দেই নাই। নিউ ১ম বর্ষ।
১ম বর্ষের পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে ট্রান্সফারের আবেদন করতে হবে, এর আগে নয়।
আমি অর্নাস ১ম বর্ষে একটি বিষয়ে সি গ্রেড পাই! গ্রেড উন্নয়নের জন্য পরীক্ষা দেয়ার সকল প্রিপারেশন নেই। এর মধ্যে আমার অন্য কলেজে ট্রান্সফার হওয়ার প্রয়োজন পরায় ট্রান্সফার হই। আমি কি এখন ইম্প্রুভমেন্ট পরীক্ষাটি দিতে পারবো? দিলেও কোন কলেজ থেকে দিতে হবে?
নতুন কলেজ থেকে
তৃতীয় বর্ষের মেয়ে শিক্ষার্থী কি এক জেলার কলেজ থেকে অন্য জেলার কলেজে ট্রান্সফার হতে পারবে ভাইয়া?
পারবে।
হয়তো পারবে। আপনি কলেজে গিয়ে যোগাযোগ করলে ভালো হবে। কেননা এই বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ (শিক্ষকগণ) ই ভালো জানেন।
আমি অনার্স ২য় বর্ষে পরীক্ষা দিলাম। এখন আমি কি অন্য জেলার বেসরকারি কলেজ থেকে নিজের জেলার সরকারি কলেজে টিসি নিয়ে আসতে পারবো?
না, বেসরকারি থেকে সরকারি কলেজে ট্রান্সফার হওয়া যায় না।