মনী, মযি এবং অদি কী? – মযি বা অদি বের হলে গোসল ফরজ হবে?

মনী হলো সাদা, আঠাল এবং গাঢ় পদার্থ, যার স্খলন পুরুষাঙ্গকে নিস্তেজ করে দেয়। মযি হচ্ছে সাদা, পাতলা তরল পদার্থ, যা স্ত্রীর সঙ্গে আদর-আহলাদের সময় নির্গত হয় (এ ব্যাখ্যা হযরত আয়শা(রা) থেকে বর্ণিত)। আর এটাকে বাংলায় কামরসওবলে। আর ওদি বা অদি হচ্ছে পেশাবের পর নির্গত অপেক্ষাকৃত গাঢ় তরল পদার্থ। তাহারাত বা পবিত্রতা অর্জন ইসলামি শরিয়তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে পাক-পবিত্র না হলে অনেক ইবাদত কবুল হবে না। এছাড়া বলা হয়েছে পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের একটি অঙ্গ। তাই শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ অপবিত্র হলে, তাকে অবশ্যই পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।

তবে পবিত্রতা অর্জন করার যেমন বিভিন্ন পন্থা রয়েছে, তেমনি একাধিক কারনে যে কেউ অপবিত্র হতে পারে। এর মধ্যে কোনো ক্ষেত্রে গোসল করে পবিত্র হতে হয়, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু অজু দ্বারাই পবিত্রতা অর্জন করা যায়। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের উপর এক প্রকার দয়া ও করুনা। কেননা, অতীতে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম আরো কঠোর ছিল। যাইহোক, নিম্নে মজি, মনি এবং অদি এর পরিচয় সহ মজি বা অদি বের হলে গোসল ফরজ হবে কি না – তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো।

আরও দেখুন


মনী কি এবং এর বিধান (হুকুম) কি

মনী হচ্ছে সাদা গাঢ়, শ্বেতবর্ণ, আঠাল অথবা পাতলা ও হলুদ রঙ বিশিষ্ট। পুরুষ বা স্ত্রীর কামভাবের কারণে বা যৌন উত্তেজনাপূর্ণ অবস্হায় যৌনাঙ্গ হতে যে পদার্থ বের হয় তাকে আরবিতে মনী বলে। বাংলাতে বীর্য বলা হয়। পুরুষের মনি হয় গাঢ়, শ্বেতবর্ণ, আঠাল, ঘ্রাণ খোরমা গাছের কুড়ির ন্যায়, যা বের হলে পুংলিঙ্গ নিস্তেজ হয়। আর স্ত্রীলোকের মনি হয় পাতলা, জরদ বা হলুদ রং বিশিষ্ট।

মনীর বিধানঃ  

স্ত্রী সঙ্গম, স্বপ্নদোষ, কল্পনাপ্রসূত কাম উত্তেজনায় যে কোন কারণেই এটা নির্গত হোক না কেন, এতে গোসল ফরজ হবে। আর মনী বা বীর্য নাপাক। বীর্য নাপাক বলেই শুকনা হলে খুটিয়ে তুলে ফেলা ও ভিজা হলে কাপড়টি ধৌত করার কথা হাদীসে এসেছে। যেমন-

অনুবাদ-  আমার বিন মাইমুন রহঃ সুলাইমান বিন ইয়াসার রাঃ কে বীর্য লাগা কাপড়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন, “আমি রাসূল সাঃ এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম তারপর তিনি নামাযের জন্য বের হতেন এমতাবস্থায় যে,কাপড়ে পানির ছাপ লেগে থাকতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩১, ২২৯}


وَمَنِيُّ الرَّجُلِ خَاثِرٌ أَبْيَضُ رَائِحَتُهُ كَرَائِحَةِ الطَّلْعِ فِيهِ لُزُوجَةٌ يَنْكَسِرُ الذَّكَرُ عِنْدَ خُرُوجِهِ، وَمَنِيُّ الْمَرْأَةِ رَقِيقٌ أَصْفَرُ وَالْمَذْيُ رَقِيقٌ يَضْرِبُ إلَى الْبَيَاضِ يَبْدُو خُرُوجُهُ عِنْدَ الْمُلَاعَبَةِ مَعَ أَهْلِهِ بِالشَّهْوَةِ وَيُقَابِلُهُ مِنْ الْمَرْأَةِ الْقَذْيُ، আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া 1/10

মনী (বীর্য) এর বৈশিষ্ট্য

  • ১) ঘাঢ় সাদা অথবা পাতলা হলুদ তরল পদার্থ। এ বৈশিষ্ট্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে- “নিশ্চয় পুরুষের পানি ঘন সাদা। আর মহিলার পানি পাতলা ও হলুদ রঙের।”[সহহি মুসলিম (৩১১)]
  • ২) বীর্যের গন্ধ গাছের মঞ্জরির মত। আর মঞ্জরির গন্ধ ময়দার খামিরের কাছাকাছি।
  • ৩) সুখানুভূতির সাথে বের হওয়া এবং বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসা।

এ তিনটি বৈশিষ্ট্য একত্রে পাওয়া শর্ত নয়। বরং একটি পাওয়া গেলেই সে তরলকে বীর্য হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে। ইমাম নববী তাঁর ‘আল-মাজমু’ নামক গ্রন্থে (২/১৪১) এ কথা বলেছেন।  

মযি কি এবং এর বিধান (হুকুম) কি


মযি বা মজি হচ্ছে সাদা স্বচ্ছ পিচ্ছিল পানি। বাংলাতে মজিকে কামরস বলে। যৌন উত্তেজনার সময় এটি বের হয়; যৌন চিন্তার ফলে কিংবা অন্য কোন কারণে এটি বের হওয়ার সময় সুখানুভূতি হয় না এবং এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে না। বরং এটা বের হবার পর উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায়। আর মহিলাদের মজিকে আরবিতে ক্বযি বলা হয়।

মযির বিধানঃ

এটা বের হলে পুরুষাঙ্গ এবং স্ত্রীলোকের যৌনাঙ্গের বাহিরে লাগলে ও কাপড়ে লাগলে তা ধৌত করে নিয়ে অযু করলেই পবিএ হয়ে যাবে। আর মযি বা কামরস নাপাক। তাই এটি শরীরে বা কাপড়ে লাগলে ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। যেমনঃ

হযরত সাহল ইবনু হুসাইফ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমার অত্যধিক মজি নির্গত হত তাই আমি অধিক গোসল করতাম। অতঃপর আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করি তিনি বলেন, মযী বের হওয়ার পর অযু করাই যথেষ্ট। তখন আমি বলি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার কাপড়ে মযী লাগলে কি করব? তিনি বলেন, কাপড়ের যে যে স্থানে মযীর নিদর্শন দেখবে, এক আজলা পানি নিয়ে উক্ত স্থান ধুয়ে নিবে, যাতে তা দূরীভূত হয়। (আবু দাউদ ২১০)

الْمَذْيُ يَنْقُضُ الْوُضُوءَ وَكَذَا الْوَدْيُ وَالْمَنِيُّ إذَا خَرَجَ مِنْ غَيْرِ شَهْوَةٍ بِأَنْ حَمَلَ شَيْئًا فَسَبَقَهُ الْمَنِيُّ أَوْ سَقَطَ مِنْ مَكَان مُرْتَفِعٍ يُوجِب الْوُضُوءَ. كَذَا فِي الْمُحِيطِ. তথ্যসুত্রঃ আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া 1/10

অদি কি এবং এর বিধান কি

কোন উত্তেজনা ছাড়াই প্রস্রাবের আগে বা পরে অথবা রোগের কারণে যে শ্বেতবর্ণের পদার্থ বিনা বেগে বের হয় তাকে ওদি বলে। এটা একটা রোগ বিশেষ।

অদির বিধানঃ অদি বা ওদি বের হলে গোসল ফরজ হয় না, শুধু অযু ভঙ্গ হয়। অদি বের হলে যৌনাঙ্গ ধৌত করে অযু কর নিলেই পবিত্রতা অর্জিত হয়।

وَالْوَدْيُ بَوْلٌ غَلِيظٌ وَقِيلَ مَاءٌ يَخْرُجُ بَعْدَ الِاغْتِسَالِ مِنْ الْجِمَاعِ وَبَعْدَ الْبَوْلِ. كَذَا فِي التَّبْيِينِ -তথ্যসুত্রঃ আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া 1/10

বীর্য এবং কামরসের মৌলিক পার্থক্য

  • ১) মনী বা বীর্য সবেগে ও শক্তি দিয়ে বের হয়। পক্ষান্তরে, মজি বা কামরস কোন গতি ছাড়া বের হয়। কখনও কখনও এটি বের হওয়ার সময় মানুষ টেরও পায় না।
  • ২) এটা সাদা, ঘন, গাঢ় তরল। এর গন্ধ গাছের মঞ্জরী বা ময়দার খামিরের মত। পক্ষান্তরে, মযি হচ্ছে, স্বচ্ছ, পাতলা, পিচ্ছিল তরল; এর কোন গন্ধ নেই।
  • ৩) এটি বের হওয়ার পর যৌন নিস্তেজতা আসে। পক্ষান্তরে মযি বের হওয়ার পর এরকম কোন নিস্তেজতা আসে না।
  • ৪) এটা বের হলে সাধারণত গোসল ফরজ হয়। পক্ষান্তরে মযি বা কামরস নির্গত হলে ওযূ নষ্ট হয় এবং গোসল ওয়াজিব হয় না। আলী রাযি. বলেন,

كُنْتُ رَجُلًا مَذَّاءً فَأَمَرْتُ رَجُلًا أَنْ يَسْأَلَ النَّبِيَّ ﷺ ، لِمَكَانِ ابْنَتِهِ، فَسَأَلَ فَقَالَ: تَوَضَّأْ وَاغْسِلْ ذَكَرَكَ  আমার অধিক মযি বের হত। নবী ﷺ এর কন্যা আমার স্ত্রী হওয়া লজ্জার কারণে আমি একজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পাঠালাম। তিনি প্রশ্ন করলে রাসূল ﷺ তাকে বললেন যে, তুমি ওযূ কর ও লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল। (বুখারী ২৬৯)

মযি বা অদি বের হলে গোসল ফরজ হবে?

যেহেতু আমরা উপরে বর্নিত মযি বা কামরসের বিধানে জেনেছি যে, মযি বা কামরস নাপাক হলেও তা বের হলে গোসল ফরজ হয় না বরং অযু ভঙ্গ হয়। ঠিক একইভাবে অদি বা রোগজনিত তরল পদার্থ বের হলে শুধু অযু ভঙ্গ হবে। গোসল করা ফরজ হবে না।

আরও পড়ুন

44 thoughts on “মনী, মযি এবং অদি কী? – মযি বা অদি বের হলে গোসল ফরজ হবে?”

  1. MD Abdus Salam

    আসসালামু আলাইকুম,,,
    যদি কখনোও উত্তেজনা অবস্থায় বীর্য বের হওয়ার আগে সাদা তারল কিছু বের হয়, এবও তার রং এবং গন্ধটা কিছুটা বীর্যের মত হয়, কিন্তু তা বীর্যের থেকেও পাতলা। এটা বের হওয়ার পরে উত্তেজনা কমেনাই, তাহলে এর দ্বরা কি গোসল ফরজ হবে?

      1. Basir Ahammed

        আসসালামু আলাইকুম!
        কেও যদি মনের মধ্যে খারপ চিন্তা ভাবনা নিয়ে ইচ্ছা কৃত ভাবে ( বীর্য নয়) একটু সাদা আর একটু পানির মত কিছু বার করলে ইসলামের দৃষ্টিতে কি এটাকে হস্তমৈথূন বলে? এবং এটা করলে সত্যি কি হস্তমৈথূন গুনাহ সেটা সে বহন করলো?
        এবং এটা হলে কি সত্যি ফরয গোসল করতে হবে নাকি উজু করে নিলেই হবে? স্যার একটু দয়া করে বলবেন! 😓😓

        1. ওয়ালাইকুমুস সালাম। জ্বী না, এটা হস্তমৈথুন বলে গণ্য হবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে মনে খারাপ চিন্তা আনার কারণে গোনাহ হবে। আগামীতে এরকম করবেন না। মাফ চাইবেন। আর হ্যা, গোসল ফরজও হবে না।

          1. Mohammad Saom

            ভাইয়া,আমি স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ সময় কাটানোর সময় স্পর্শের কারণে উত্তেজিত অবস্থায় সামান্য তরল নির্গত হয়,বের হওয়ার সময় কোন অনুভূতি হয় না।আর বীর্যের মতো গাঢ়ও নয়,স্বচ্ছ তরল।দেরিতে পরিষ্কার করলেও লজ্জাস্থানে এর দাগ দেখা যায় না।তবে লজ্জাস্থান নিস্তেজ হয়েছে খানিকটা।এখন কি এজন্য গোসল ফরজ হবে?

  2. md shajahan

    যখন মজি বের হয় তখন তো সেটা অনুভব হয় না, পরে যখন সেটা বুঝতে পারি তখন সেটা হয়তো কাপড়ে লেগে যায়,এবং দেখা ও যায় না,,, তখন কি করতে হবে?

    1. কাপড় চেঞ্জ করে নামাজ পড়তে হবে। কেননা, যেখানেই মজি লাগুক, লাগছে এটা যেহেতু নিশ্চিত তাই চেঞ্জ করতে হবে।

  3. Sayed ahmad

    স্যার,আমি দৈনিক এক্সারসাইজ করি। এক্সারসাইজ করার সময় হার্ড এক্সারসাইজ এর ক্ষেত্রে আমার লিঙ্গ দিয়ে পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়ে যায়। এর কারন ও করনীয় সম্পর্কে প্লিজ একটু বলুন,,,,

    1. এটা রোগের কারণে হতে পারে অথবা উত্তেজনা থেকে হতে পারে। যদি উত্তেজনা ছাড়াই বের হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখান। নতুবা ভয়ের কিছু নেই। আর যেই অবস্থায়ই হোক কামরস বের হলে অজু নষ্ট হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!