জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম । জানাজার নামাজ পড়ার পদ্ধতি কোনো মৃত মুসলমান ব্যক্তিকে কবর দেয়ার পূর্বে একজন ইমামের নেতৃত্বে দলবদ্ধভাবে যে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, সেটিই হচ্ছে জানাজার নামাজ। জানাযা একটি বিশেষ প্রার্থনা, যা মুসলমান অর্থাৎ ইসলাম ধর্মামলম্বীদের জন্য ফরযে কেফায়া বা সমাজের জন্য আবশ্যকীয় দায়িত্ব। তবে কোনো এলাকা বা গোত্রের পক্ষ থেকে একজন আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়।
এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাযায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই উত্তম। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। জানাযার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার। জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
জানাজার নামাজ ৪ তাকবিরের নামাজ। এ নামাজ রুকু ও সিজদা ছাড়া শুধু দাঁড়িয়ে আদায় করতে হয় এবং তা সালাম ফেরানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সাধারণত জানাযার নামাযের শেষে মুনাজাত বা দোয়া করতে হয় না কারণ ইসলামের প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুযায়ী এ নামাযের মাধ্যমেই মৃতের জন্য দোয়া করা হয়। জানাযা শেষে মৃতব্যক্তিকে অবিলম্বে কবরস্থানে নিয়ে যেতে হয় এবং ইসলামী রীতিতে কবর তৈরী করে মাটিতে দাফন করতে হয়। চলুন জানাজার নামায পড়ার সহীহ নিয়ম বিস্তারিত জেনে নেই :
১) নিয়ত করা : জানাযা নামাযের প্রথমে নিয়ত করবে। তবে, এই নিয়ত মুখে বলা জরুরী নয়। নিয়ত করার পর তাকবীর দিয়ে নামায শুরু করতে হবে এবং হাত বাধতে হবে।
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবা’য়া তাকরীরাতি, ছালাতিল জানাযাতি, ফারধুল কেফায়াতি, ওয়াছ ছানায়ু লিল্লাহি তা’য়ালা, ওয়াছ ছালাতু ‘আলান নাবিয়্যি ওয়াদ্দোয়ায়ু লিহাযাল মাইয়্যেতি, এক্বতেদাইতু বিহাযাল ইমামি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’য়বাতিশ শারিফাতি, আললাহু আকবার।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর তায়ালার উদ্দেশ্যে জানাযা নামাজের চারি তাকবীর ফরযে কেফায়া, কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা, রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আর্শীবাদ)।
★★উল্লেখ্য যে, নিয়তের ক্ষেত্রে অন্যান্য নামাযের নিয়তের ন্যায়, ঈমাম সাহেব অতিরিক্ত এই বাক্যটি (আনা ইমামুল লিমান হাধারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু) এবং মোক্তাদিগণ অতিরিক্ত এই বাক্যটি (একতেদাইতু বিহাযাল ইমাম) বলবে। আর নিয়তের মধ্যে পুরুষের ক্ষেত্রে লিহাযাল মাইয়্যিততি বলবে। আর মহিলা হলে লিহাযিহিল মাইয়্যিতি বলবে।
২) নিয়তের পরে ছানা পড়া : প্রথম তাকবীর দেওয়ার পর নিম্নোক্ত ছানাটি মনে মনে পড়া।
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণঃ সুব-হা-নাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়াতাবা-রাকাসমুকা, ওয়াতায়ালা জাদ্দুকা, ওয়াজাল্লা ছানাউকা ওয়ালা-ইলাহা গাইরুকা। অনুবাদ : হে আল্লাহ আমরা তোমার পবিত্রতার গুণগান করঅছি। তোমার নাম মঙ্গলময় এবং তোমার স্তুতি অতি শ্রেষ্ঠ, তুমি ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।
৩) দুরুদ শরীফ : দ্বিতীয় তাকবীর দেওয়ার পর নিম্নোক্ত দুই দুরুধ শরীফ পড়া।
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ -اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْد
– اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারন : আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদ, ও’য়ালা আ লি মুহাম্মদ, কামা ছাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া’লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদ, ও’য়ালা আলি মুহাম্মাদ, কামা বা-রাকতা ‘আলা ইব্রাহীম, ও’য়ালা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ। অনুবাদ : হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর, যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ।নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসাভাজন এবং মহামহিম। (2 নং দুরুধ) হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর, যেরূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসাভাজন এবং মহামহিম।
৪) জানাযার দোয়া : এখন একটা জিনিস লক্ষ্য করতে হবে যে মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয়, পুরুষ বা মহিলা যাই হোক না কেন, ৩য় তাকবীর দেওয়ার পর নিম্নোক্ত ১ নং দো’য়া পড়বে। তবে মৃত ব্যক্তি যদি নাবালেগ (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) এবং ছেলে হয়, তখন নিম্নোক্ত ২ নং দো’য়া পড়বে। আর নাবালেগ মেয়ে হলে নিম্নোক্ত ৩ নং দো’য়া পড়বে।
১ নং দোয়া
اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَِيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِْسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الاِْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْحَمَ الرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা, ওয়া ছাগীরিনা, ওয়া কাবীরিনা, ওয়া যাকারিনা, ওয়া উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহ-ইয়াইতাহু মিন্না, ফাআহয়িহি ‘আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না, ফাতাওয়াফ ফাহু ‘আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রা-হিমিন।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃত্যুর মুখে পতিত কর। তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও।
২ নং দোয়া
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ ‘আলহু লানা ফারতাঁও ওয়াজ ‘আলহু লানা আজরাও, ওয়া যুখরাঁও, ওয়াজ আলহু লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান। অনুবাদঃ হে আল্লাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
৩ নং দোয়া
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا اَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهَا لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعةَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ ‘আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ ‘আলহা লানা আজরাঁও, ওয়া যুখরাঁও, ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াতাও, ওয়া মুশাফ্ফায়ান। অনুবাদঃ হে আল্লাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
সর্বশেষে, ইমাম সাহেব ৪র্থ তাকবীর দিয়ে, ডানে এবং বামে ছালাম ফিরাইবেন। জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম
আরও পড়ুন